ঢাকা   বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রশ্ন: মানবতার কল্যাণে মহানবী (সা:)-এর অবদান কী?

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৯ এএম

উত্তর: তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও শেষ দিনের আকাক্সক্ষী এবং বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করে। (সূরা আল আহযাব : ২১)। বিশ্বমানব সভ্যতার ইতিহাসে হজরত মুহাম্মদ সা: সর্বপ্রথম এমন এক সভ্যতা সংস্থাপন করলেন, যা ছিল সত্যিকার অর্থেই মানবিক মূল্যবোধসমৃদ্ধ। তাঁর আগমনপূর্ব যুগটি ছিল দলাদলি, হানাহানি ও রক্তারক্তির যুগ। মানুষে মানুষে ছিল রক্ত, বর্ণ, ভাষা ও আভিজাত্যের দুর্লঙ্ঘনীয় প্রাচীর। সমাজ ছিল তখন পশুত্ব ও পৌত্তলিকতার নিকষ কালো অন্ধকারে আচ্ছাদিত। মানুষ ছিল তখন শান্তিহারা, অধিকারহারা, নির্মমভাবে অত্যাচারিত ও নিপীড়িত। নারী জাতির অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। এককথায় তৎকালীন মানবসমাজে মুক্তি, শান্তি ও প্রগতির আশা হয়ে উঠেছিল সুদূরপরাহত। মানব ইতিহাসের এই ঘোর দুর্দিনেই বিশ্বমানবতার পরম বন্ধু মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: মানবতার মুক্তির সনদ নিয়ে সুন্দর এই বসুন্ধরায় আগমন করেছিলেন। আধুনিক সভ্যতার সব ভালো, সব সুন্দরের ভিত্তি মহানবি সা:-ই স্থাপন করেছিলেন। মূলত তাঁর আগমনই ছিল মানবকুলের জন্য অপূর্ব নিয়ামত, রহমত ও চিরন্তন শান্তির মহান সওগাত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমত রূপেই প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)। মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করে একটি সত্যনিষ্ঠ বিশ্বভ্রাতৃসমাজ গড়ে তোলার মধ্য দিয়েই যে কেবল একটি সত্যিকার শান্তির পৃথিবী সংস্থাপন করা সম্ভব সেই শিক্ষা প্রিয়নবী সা: দিয়েছেন এবং সেই শান্তির দুনিয়া গড়ার নমুনা হিসেবে মদিনা মুনাওয়ারায় একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। একনায়কত্ব ও রাজতন্ত্রের চির অবসান ঘটানো সেই রাষ্ট্র বিশ্ব মানবসভ্যতার ইতিহাসে দীর্ঘকালব্যাপী সোনালি অধ্যায় রচনা করেছে। আজকের যে উৎকর্ষ আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা সেই সভ্যতারই ফসল। ষষ্ঠ শতকের আরব ছিল পাপের কলুষ কালিমায় আচ্ছান্ন। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ ছিল তখনকার প্রচলিত নীতি। এককথায় নির্যাতিত মানবতা অমানুষিক পশুশক্তির শিকারে পরিণত হয়েছিল। এরূপ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে মুক্তির নিশ্বাস ফেলার জন্য গুমরে মরছিল নির্যাতিত, নিপীড়িত অসহায় মানুষের আত্মা। এ অবস্থায় মহানবী সা: ঘোর অজ্ঞানতার কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিশ্বসমাজে ইসলামের সুবিমল জ্যোতি বিকিরণ করেন। নিঃস্ব ও অসহায়দের সেবা, অত্যাচারীদের বাধা প্রদান, বঞ্চিতদের আশ্রয় এবং বিভিন্ন গোত্রের মাঝে পারস্পরিক শান্তিশৃঙ্খলা ও সৌভ্রাতৃত্ব স্থাপন করা প্রভৃতি কর্মসূচি সামনে রেখে যৌবনকালে তিনি যুবকদের নিয়ে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে কল্যাণধর্মী একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। আমৃত্যু তিনি সংগ্রাম করে গেছেন সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায়। আজকের এ ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ সমাজেও মহানবীর সা: আদর্শ অনুসরণে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব। ইসলাম আগমনের আগে দুনিয়া নারীকে অকেজো ও অকল্যাণকর সভ্যতা-সংস্কৃতির পরিপন্থী বা তার প্রতিবন্ধক মনে করে জীবনের কর্মক্ষেত্র থেকে একেবারে বাইরে ফেলে দিয়েছিল। তাকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, নিস্ক্রিয়তার এমন এক গহবরে যেখান থেকে উঠে আসা ও উত্থান-অগ্রগতি লাভ করা কোনোক্রমেই সম্ভবপর ছিল না। মানবতার পরম বন্ধু মহানবী সা: তাদের এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। নারী সমাজকে হীনতার নিম্নতম স্তর থেকে তুলেছেন অনেক ঊর্ধ্বে। দিয়েছেন তাদের তুলনাহীন মর্যাদা, ন্যায্য অধিকার। দিয়েছেন সামাজিক আর্থিক নিরাপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তা। সম্পদে নারীর অধিকার করেছেন প্রতিষ্ঠা। ঘোষণা দিয়েছেন, নারী-পুরুষ উভয়ে উভয়ের জন্য ভূষণস্বরূপ। মেয়েদের মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী সা: বলেন, ‘নিশ্চয় সন্তানের বেহেশত মায়ের পদতলে।’ সম্মান, সেবা ও সাহায্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে মায়ের কথা তিনি তিনবার উল্লেখ করেছেন এবং একবার উল্লেখ করেছেন বাবার কথা। বর্তমান বিশ্বে ‘নারী অধিকার’ ইস্যু নিয়ে যে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে এবং ব্যয়িত হচ্ছে লক্ষকোটি বিলিয়ন ডলার তার সমাধানে আল্লাহ প্রদত্ত ও মহানবী সা: প্রদর্শিত বিধান মেনে চললেই নারী অধিকারসহ বিশ্ব মানবতার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সভ্যতার প্রধান উপাদান শিক্ষা। আর সুশিক্ষা হচ্ছে আদর্শ মানুষ ও সমাজ বির্নিমাণের হাতিয়ার।

উত্তর দিচ্ছেন: মো: লোকমান হেকিম, চিকিৎসক ও কলামিস্ট।

 


বিভাগ : ইসলামী প্রশ্নোত্তর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

হাটুর উপর কাপড় উঠে গেলে অজু ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে?
হাই কমোডের পাশের ট্যাবে অজু করা প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন : আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। এমতাবস্থায় কি আমি তার সাথে যৌন সম্পর্ক করতে পারি?
ধর্ম মেয়ে ধর্ম ছেলে বানানো প্রসঙ্গে।
ঋণগ্রহীতা মারা যাওয়ার পর পাওনাদার তার পাওনা মাফ করে দেওয়া প্রসঙ্গে।
আরও

আরও পড়ুন

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার

‘সাইবার মানডে’ উপলক্ষে ওয়েব হোস্টিংয়ে লিমডা হোস্টে চলছে ৬০% পর্যন্ত ছাড়!

‘সাইবার মানডে’ উপলক্ষে ওয়েব হোস্টিংয়ে লিমডা হোস্টে চলছে ৬০% পর্যন্ত ছাড়!

ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী

ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী

ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য

ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য

মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ

মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ

নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের

নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের

গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ

আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন

মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা

এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা

কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প

কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প

প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম

প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম

দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক

দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক

পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা

পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা

মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী

মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী

কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা

কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা

কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার

কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার

ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প

ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প

অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ

অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ